শেখ রাসেল,মোংলা প্রতিনিধি: সুন্দরবনের করমজলে বন্যপ্রাণী ও বনের তথ্য সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য তৈরী হচ্ছে মিউজিয়াম। এর ফলে এখানে আসা পর্যটক ও শিক্ষার্থীরা সহজেই বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পশু-পাখি ও বন সম্পর্কে জানতে পারবেন। ।
দেশী-বিদেশী পর্যটকট ও শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা, গবেষনা ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে মৃত্যু বন্যপ্রানী সংরক্ষনে ইন্টারপিটিশন ও তথ্য কেন্দ্র তৈরী করছে বন বিভাগ। মোংলার সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রানী প্রজনন কেন্দ্র সংলগ্নে এক একর জায়গা নিয়ে বন মন্ত্রনালয়ের অধিনে এ প্রতিষ্ঠানটি তৈরী করা হচ্ছে। 
বন বিভাগ বলছে, এই প্রথম সুন্দরবনে থাকা সব ধরণের বন্যপ্রানী এবং বিলুপ্ত প্রজাতির প্রানীদের দেহবশেষ সংরক্ষন করা হবে, যা দেখে সহজেই পরিচিত হতে পারে বনের সৌন্দার্য উপভোগ করতে আসা ভ্রমন পিপাশুরা। এতে মানুষের আগ্রহ ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে বলেও মনে করছেন বন বিভাগ।
কালক্রমে সুন্দরবনের অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। নানা প্রজাতির বৃক্ষ, মাছ হারিয়ে গেছে। যার অস্তিত্ব এখন খুজে পাওয়া দুষ্কর। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য বিরল ও বিলুপ্ত প্রজাতির বন্যপ্রানীর পরিচিতির লক্ষ্যে সুন্দরবনের মৃত প্রাণীরর দেহবশেষ সংরক্ষণের উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 
এখানে  সব ধরনের মৃত বন্যপ্রাণী ও গাছপালার নমুনা সংরক্ষণ করার জন্য প্রকৃতি ব্যাখ্যা ও তথ্য কেন্দ্রটি তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি এখানে বনের অপরাপর তথ্য থাকবে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের পর্যটক ষ্পট করমজলে পশ্চিম পাশে নতুন নির্মিত দ্বিতলা বভনের এ কেন্দ্রটি ২০২২ সালের জুনে এর কার্যক্রম শুরু হয়, যা ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা।
সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশ থেকে প্রাকৃতিক ভাবে যে বন্যপ্রানী মারা যাবে সেগুলো করমজলের এ কেন্দ্রেটিতে সংরক্ষন করা হবে। ভবিষ্যতে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র রক্ষায় করমজল পর্যটক স্পটে ভ্রমনে আসা দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের জ্ঞান অর্জন সহ শিক্ষা, গবেষনা ও বিনোদনের উদ্দেশ্যেই সরকার এ প্রকল্পটি গ্রহন করেছে। প্রথমে একটি কুমির ও ২টি মৃত বাঘের কংঙ্কাল দিয়ে এ কেন্দ্রটির শুভ সুচনা করতে যাচ্ছে বন বিভাগ। এখানে পরিবেশ সংরক্ষন কাজের প্রতিনিধি মোঃ আরাফাত রহমান ও বঙ্গবন্ধু সেতু অ লের যাদু ঘরের সংরক্ষনকারী প্রানী বিশেষজ্ঞ মোঃ জুয়েল রানা সহ বন বিভাগের কয়েজন বনরক্ষীরা “ইন্টারপিটিশন এন্ড ইনফরমেশন সেন্টার কাম ছুবেনিয়র সপ” বা সুন্দরবনের বন্যপ্রানীদের তথ্য কেন্দ্র’র কাজের সহায়তা করছে। 
এ কেন্দ্রটি বভিষ্যতে দেশী-বিদেশী বন্যপ্রানী বিশেষজ্ঞ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষনাকে কাজে লাগানো ছাড়াও আগামীতে সুন্দরবনে একটি বড় মিউজিয়াম তৈরীর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের বলেও জানায় বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রাকৃতিকভাবে যে বন্যপ্রাণী মারা যাবে সেগুলো করমজলের এ কেন্দ্রেটিতে সংরক্ষণ করা হবে। এর পাশাপাশি সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছ-গাছালি, তাদের ফল-মূল, মাছ-কাঁকড়া অন্যান্য প্রজাতির নমুনাও এখানে সংরক্ষণ করা হবে। 
ভবিষ্যতে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় করমজল পর্যটক স্পটে ভ্রমনে আসা পর্যটক ও গবেষকগণ বণ্যপ্রাণী ও সুন্দরবন সম্পর্কে ধারণা পাবেন। পাশাপাশি শিক্ষা, গবেষণা ও বিনোদনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই এ প্রকল্পটি বন বিভাগ বাস্তবায়ন করছে। প্রথমে একটি কুমির ও ২টি মৃত বাঘের কংঙ্কাল দিয়ে এ কেন্দ্রে সূচনা হচ্ছে।
এ ইন্টারপ্রিটেশন এন্ড ইনফরমেশন সেন্টারটি ভবিষ্যতে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষনাকে কাজে লাগানো ছাড়াও আগামীতে সুন্দরবনে একটি বড় মিউজিয়াম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনে অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যা মানুষ এখন না দেখলে চিনতে পারবে না। অতীতের হারিয়ে যাওয়ার বন্য প্রাণীদের কথা চিন্তা করে সরকার এ গবেষণা কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেয়। বিভিন্ন মৃত বন্যপ্রাণীর দেহাবশেষ সংরক্ষণে যমুনা মিউজিয়ামের কিউরেটর জুয়েল রানা বন বিভাগকে সহযোগিতা প্রদান করছেন।
পুর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, এখানে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীদের প্রতিকৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ এ বনের যাবতীয় তথ্য সেখানে সংরক্ষণ করা হবে। যাতে পর্যটক ও গবেষকরা এসে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা নিতে পারে। সুন্দরবন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তারা জানতে পারে এ উদ্দোশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে বন বিভাগ এ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে।
২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বন বিভাগের উদ্যোগে ৮ একর জমির ওপর দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। এখন করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি সুন্দরবনে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হবে।